একটু বুঝে পড়ুন । লাইফটাইম কার্শফের সূত্র নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবেনা । আশা করি। কার্সফের সূত্র আলোচনার আগে কয়েকটি বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলে রাখি ।
মনে করুন, একটি রাস্তা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ঢালু ।
অর্থাৎ রাস্তাটি উত্তর দিকে উঁচু আর দক্ষিণ দিকে নিচু । এখন যদি আপনি উত্তর থেকে
দক্ষিণ দিকে সাইকেল চালিয়ে যেতে চান, তাহলে রাস্তা আপনাকে সাপোর্ট দেবে । কিন্তু
আপনি যদি রাস্তার দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে যেতে চান, তবে রাস্তা আপনাকে বাঁধা
দেবে । রাস্তাটি আগে ঠিক আপনাকে যতটা সাপোর্ট দিয়েছিল, এবার ঠিক ততটাই আপনার থেকে
অতিরিক্ত শক্তি নেবে । বর্তনিতে ব্যাটারিগুলো এরকম ভূমিকাই পালন করে । আমরা জানি,
বর্তনিতে ব্যাটারি সব সময় বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয় । কিন্তু এমনটা সব ক্ষেত্রে সত্য নয়
। আপনি যদি একটি ব্যাটারির মাইনাস থেকে প্লাসের দিকে যান বা ব্যাটারিটিকে মাইনাস
থেকে প্লাস এর দিক দিয়ে অতিক্রম করেন, তবে ব্যাটারি তার লিখিত ভোল্টেজের সমান
ভোল্টেজ আপনাকে দেবে । অনেকটা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে সাইকেল চালানোর মত ।
আবার যদি আপনি উল্টা পথে যান বা ব্যাটারিকে প্লাস থেকে মাইনাসের দিক দিয়ে
অতিক্রম করেন, তবে ব্যাটারি তার গায়ে লিখিত ভোল্টেজের সমান ভোল্টেজ আপনার থেকে
নেবে । ঠিক যেমনটা দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে সাইকেল চালাতে ঘটেছিল ।
আর সে জন্য আমরা বলব, ব্যাটারির ভোল্টেজ বা তড়িচ্চালক শক্তির দিক ব্যাটারিকে
অতিক্রম করার সময় মাইনাস থেকে প্লাসের দিকে । অর্থাৎ ব্যাটারির প্লাস প্রান্ত থেকে
বর্তনি ঘুরে মাইনাসে প্রবেশ করবে ।
এবার কথা বলব, রোধ নিয়ে ।
রোধ হচ্ছে একটি ভাঙ্গা ব্রিজের মত । ভাঙ্গা ব্রিজকে যেমন আপনি যেকোন দিক থেকেই
অতিক্রম করেন না কেন, সে আপনাকে বাঁধা দেবেই । তেমনি রোধকে সামন কিংবা পিছন দিক
থেকে অতিক্রম করতে গেলে সে উভয় ক্ষেত্রে বাঁধা দেবেই । তাই আমরা রোধের ভোল্টেজের
সামনে সর্বদা ঋণাত্মক চিহ্ন দেব । আবার রোধের মধ্য দিয়ে যে কারেন্ট বা তড়িৎ
প্রবাহিত হয়, তার দিক রয়েছে । বর্তনিতে এক বা একাধিক ব্যাটারি থাকতে পারে । কিন্তু
আপনি যে ব্যাটারিকে প্রধান হিসেবে ধরে নেবেন (আপনার যেটা ইচ্ছা) সেই ব্যাটারির
ভোল্টেজের দিক যেদিকে, পুরো বর্তনিতে তড়িৎ প্রবাহের দিক সেদিকে এবং অবশ্যই সেদিকে
হবে ।
এই কথাগুলো মাথায় রাখলেই আপনার কাছে কার্শফের সূত্র পানির মত সোজা হয়ে যাবে ।
কিভাবে ? দেখাচ্ছি । তার আগে সূত্রটি একবার শুনে নিন । সূত্রটি হল- সার্কিটের একটি
বদ্ধ লুপে মোট ভোল্টেজের সমষ্টি শুন্য হবে ।
এখন এই ভোল্টেজের গল্প কোথায় থাকে ? ব্যাটারিতে এবং রোধের মধ্যে । কোথাও
উত্থান, কোথাও পতন । সে গল্প পড়ে হবে । আর থাকে রোধের মধ্যে । যাতে সর্বদাই
ভোল্টেজ পতন । এখন কার্শফের সূত্র করার সময় শুধু একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, কোন
ভেক্টর রাশির বিপরীত দিকে গেলে তার সামনে মাইনাস চিহ্ন বসে । (এটা কোন কথা ? এটা
তো বাচ্চারাও জানে !!!)
এবার আপনি বর্তনি একটি ব্যাটারি থাকলে সেটিকে, আর একাধিক ব্যাটারি থাকলে যেকোন
একটিকে প্রধান ধরে সেটার ভেক্টর দিক অনুসারে (অর্থাৎ সেটার প্লাস প্রান্ত থেকে
বর্তনি ঘুরে মাইনাসের দিকে) পুরো সার্কিটে তড়িৎ প্রবাহিত হবে । সে অনুসারে বর্তনিতে
তড়িৎ প্রবাহের দিকে নির্দেশক তীর চিহ্ন দিয়ে ফেলুন । কাজ শেষ । এবার সবগুলো
ব্যাটারির ভোল্টেজ(E অথবা V) যোগ এবং রোধের ভোল্টেজ
(IR) বিয়োগ করে সমান শুন্য দিন । তবে যেহেতু E, V এবং I ভেক্টর রাশি, তাই এদের সামনে প্রথম বন্ধনিতে
যথাযথ চিহ্ন দিতে(প্লাস অথবা মাইনাস) ভুলে যাবেন না । এবার ইচ্ছামত সার্কিট আঁকুন
এবং সমাধান করুন । যারা আমার প্রত্যেকটি কথা বুঝেছেন, তাদের কাছে মনে হতে
পারে-কার্শফের সূত্র কি এতই সহজ ? ঠিক আছে, তাহলে একটা সার্কিট সমাধান করাই যাক ।
চিত্রের বর্তনিতে যেহেতু একাধিক ব্যাটারি রয়েছে, তাই E1 ব্যাটারিকে আমরা প্রধান ব্যাটারি হিসেবে ধরে নিচ্ছি । এর প্রবাহের দিক মাইনাস থেকে প্লাসের দিকে । এই দিক অনুসারে পুরো বর্তনিতে তড়িৎ প্রবাহের দিক নির্দেশক চিহ্ন দিয়ে নিলাম । তাহলে পুরো বর্তনিতে তড়িৎ প্রবাহের দিক আমাদের নির্দেশিত তীর চিহ্নের দিকে । যেহেতু পুরো বর্তনিটি সিরিজ সমন্বয়ে আছে, কাজেই সকল ব্যাটারি এবং রোধের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহের মান সমান এবং একে I দ্বারা সূচিত করছি ।
এখন আমাদের কাজ হল, ব্যাটারির ভোল্টেজকে যোগ এবং রোধের ভোল্টেজকে বিয়োগ করে
সমান শুন্য দেয়া ।
E1 - IR1 + (-E2) - IR2 + E3 - IR3 = 0
সবই ঠিক ছিল । কিন্তু আমরা E2 এর সামনে ঋণাত্মক চিহ্ন দিয়েছি, কারণ এর
দিক আমাদের নির্দেশিত দিকের বিপরীত দিকে, যা আগেই ঢালু রাস্তার উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে
দিয়েছি ।
এবার আমরা যদি আমাদের নির্দেশিত দিকের উল্টা দিকে আমাদের সূত্র প্রয়োগ করি,
তবে-
(-E1) – (-I).R3 + E3 – (-I).R2 + (-E2) – (-I).R1 = 0
একইভাবে আমরা E1 এবং E3 এর সামনে ঋণাত্মক চিহ্ন দিয়েছি,
কারণ এর দিক আমাদের এবারের দিকের বিপরীত দিকে । তড়িৎ প্রবাহ I এর সামনে ঋণাত্মক চিহ্ন বসেছে । কারণ এর দিক আমাদের নির্দেশিত দিকে,
কিন্তু আমরা তো যাচ্ছি বিপরীত দিকে । এবার ইচ্ছামত সার্কিট আঁকুন এবং প্রাকটিস
করুন ।
হ্যাপি সার্কিট ।
© জিওন আহমেদ
0 মন্তব্যসমূহ