মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাখ্যা কি স্রষ্টার অস্তিত্বকে নাকোচ করে দেয় ?

আমাদের এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং এর ধারাবাহিক গতিবিধি নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন । কিভাবে মহাবিশ্ব তার নিজের গতিবিধিতে মিলিয়ন বছর ধরে অক্ষুণ্ণ থাকছে ? কিভাবেই বা এর সৃষ্টি ? এই প্রশ্ন যে আমাদেরশুধু ভাবাচ্ছে, তা কিন্তু নয় । শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের মনে এই প্রশ্নগুলো এসেছে । এখানে জ্ঞানের স্বল্পতা এবং কারণ ও ধারাবাহিকতার ছন্দে অনেকেই স্রষ্টার অস্তিত্বকে নাকোচ করেও দিয়েছে । আবার কেউ কেউ বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের আবিস্কারের সাথে সাথে ধর্মগ্রন্থগুলোকে নতুন করে ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছে । কিন্তু সেটা কতটা যৌক্তিক ?

এই মহাবিশ্ব এবং এর সৃষ্টি সম্পর্কে হয়তো প্রকৃত সত্যটি আমরা এখনও জানিনা, কিন্তু যুগ যুগ ধরে মানুষের প্রশ্ন আর বিজ্ঞানের অনুসন্ধান আমাদেরকে এমন কিছু তথ্য এবং আবিস্কার উপহার দিয়েছে, যা দিয়ে এই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব নিয়ে আমরা অনেকটা ধারনা নিতে পারি । যাতে আমাদের অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে ।

আমাদের মনে সবার আগে প্রশ্ন আসলো, এই মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তু আসলে কি ? তারা কি দিয়ে তৈরি ? কোথা থেকে এলো ? জন ডাল্টন, জে জে থমসন, রাদারফোর্ড, চ্যাডউইক সহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর সহায়তায় মানুষ এর কিছুটা উত্তর পেয়ে গেল । আমরা জানতে পারলাম, এই মহাবিশ্বের সকল বস্তুই মূলত সামান্য কিছু সংখ্যক মৌলের সমন্বয়ে গঠিত । যাদেরকে আমরা এককভাবে পরমাণু বলে থাকি । এদের এক বা একাধিক মিশ্রণেই তৈরি হয়েছে এই মহাবিশ্বের সকল বস্তু । যাদের জানা সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১১৮টি । আর তাদেরকে দীর্ঘ্য পর্যায় সারণীতে সাজিয়েছেন ম্যান্ডেলিফ । অবশ্য বিজ্ঞানী বোরও সাজিয়েছিলেন । কিন্তু তাতে ত্রুটি থাকায়, ম্যান্ডেলিফের পর্যায় সারণীটাই আমরা মানি । কিন্তু কোথা থেকে এই পরমাণুগুলো এলো তার উত্তর আমরা পেলাম না ।

এখন আবার মানুষের মনে প্রশ্ন আসলো, এই পরমানুগুলো আসলো কোথা থেকে ? এরা কি দিয়ে তৈরি । কোথা থেকে এলো, তার উত্তর না পেয়ে বরং আমরা এরা কি দিয়ে তৈরি, তার উত্তর আমরা পেয়ে গেলাম । ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন নামক তিনটি মৌলিক কণা আরও সহ বেশকয়েকটি কণার সমন্বয়ে তৈরি এই পরমাণুগুলো । আবার প্রশ্ন আসলো, এই ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, কোয়ার্ক নামক কণাগুলো আবার আসলো কোথা থেকে ? এরা আবার কি দিয়ে তৈরি । এবারও আমরা উত্তর পেলাম না, এরা কোথা থেকে এসেছে ? কিন্তু এরা কি দিয়ে তৈরি, তার উত্তর আমরা কিছুটা পেয়ে গেলাম । এরা ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রনের চেয়েও আরও অনেক ক্ষুদ্র কণিকা দিয়ে তৈরি ।

সব কয়টিবার সকল প্রশ্নে কি দিয়ে তৈরি ? তার উত্তর পেলেও কোথা থেকে এরা এসেছে ? তার উত্তর আমরা পেলাম না । তাই এবার বিজ্ঞান একটু নড়েচড়ে বসল । এবার শুধু প্রশ্ন করল, ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রনের চেয়েও আরও অনেক ক্ষুদ্র এই কণাগুলো কোথা থেকে তৈরি ?

এবার পদার্থবিজ্ঞান উত্তর দিল, আমরা বায়ুশুন্য যেসব স্থানকে শুন্যস্থান বলছি, তারা আসলে শুন্য নয় । সেটা আসলে কোয়ান্টাম শুন্যতা । আর এখানে আছে এক অদৃশ্য শক্তি । যাকে আমরা ভ্যাকুয়াম এনার্জি বলি । আর এই ভ্যাকুয়াম এনার্জি থেকে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে কণাদের সৃষ্টি এবং ধ্বংসের খেলা চলতে চলতে কিছু কণা ধ্বংস না স্থায়ী হয়ে থেকে যায় । যারা অনেকে একত্রিত হয়ে এক বৃহৎ কণা তৈরি করে । আর সেই কনার বিস্ফোরনেই হল আমাদের এই বিশাল বস্তু ভান্ডার ।

এবারও কিন্ত মানুষের প্রশ্নের চিন্তার শেষ হলনা । মানুষ এবার প্রশ্ন করল- প্রকৃত শুন্যতা থেকে কোয়ান্টাম শুন্যতা আসলো কোথা থেকে ? শুন্যতায় এই ভ্যাকুয়াম এনার্জি আসলো কোথা থেকে ? আজও অনেকেই যার অনুসন্ধান করে চলেছে । কাজেই এই পরিস্থিতিতে যদি কেউ বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বে অস্বীকার করে, সেটা শুধুই অজ্ঞতায় বিজ্ঞতা প্রমাণ করার অপচেষ্টা । তবে বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারের সাথে ধর্মগ্রন্থে সদৃশ্যতা খোঁজাও ধর্মকে কিছুটা প্রশ্নের মুখোমুখি করার মত ।

 

জিওন আহমেদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ