অবশ্যই জানতে হবে-
- তাপ ও তাপমাত্রা ।
- পদার্থের তাপমাত্রিক ধর্ম ।
- সেলসিয়াস, ফারেনহাইট
ও কেলভিন স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক ।
- পদার্থের তাপীয় প্রসারণ ।
- তরলের প্রকৃত ও আপাত প্রসারণ ।
- পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনে তাপের
প্রভাব ।
- গলন, বাষ্পীভবন
ও ঘনীভবন ।
- গলনাঙ্কের উপর চাপের প্রভাব ।
- গলনের সুপ্ততাপ ও বাষ্পীভবনের
সুপ্ততাপ ।
- বিভিন্ন বিষয়ের উপর বাষ্পায়নের
নির্ভরশীলতা ।
- আপেক্ষিক তাপ ।
- আপেক্ষিক তাপ ও তাপধারণ ক্ষমতার
সম্পর্ক ।
- ক্যালরিমিতির মূলনীতি ।
- তাপ
ও তাপমাত্রা ।
আলোচনা
সেলসিয়াস, ফারেনহাইট
ও কেলভিন স্কেলে তাপমাত্রার একক যথাক্রমে °C, °F এবং K । সেলসিয়াস
স্কেলে নিম্ন স্থিরাঙ্ক 0°C,ফারেনহাইট
স্কেলে 32°F এবং কেলভিন স্কেলে 273K
। উর্ধ্বস্থিরাঙ্ক
সেলসিয়াস স্কেলে 100°C, ফারেনহাইট
স্কেলে 212°F এবং কেলভিন স্কেলে 373K
।
তাপ প্রয়োগ করলে কঠিন পদার্থের
দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল এবং আয়তন
বৃদ্ধিপায় ।
পদার্থের উপর চাপের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য গলনাঙ্ক পরিবর্তিত
হয় । চাপের জন্য গলনাঙ্ক পরিবর্তন দুই ভাবে হতে পারে । কঠিন থেকে তরলে রূপান্তরের
সময় যেসব পদার্থের আয়তন হ্রাস পায় (যেমন বরফ), চাপ
বাড়লে তাদের গলনাঙ্ক কমে যায় অর্থাৎ কম তাপমাত্রায় গলে ।
কঠিন থেকে তরলে রূপান্তরের সময় যেসব পদার্থের আয়তন বেড়ে
যায় (যেমন মোম), চাপ বাড়লে তাদের
গলনাঙ্ক বেড়ে যায় অর্থাৎ বেশি তাপমাত্রায় গলে ।
গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা
তাপঃ তাপ হলো এক প্রকার
শক্তি যা ঠান্ডা ও গরমের অনুভূতি জাগায় । তাপ
উষ্ণতর বস্তু থেকে শীতলতর বস্তুর দিকে প্রবাহিত হয় । সুতরাং
উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য যে শক্তি এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে প্রবাহিত হয় তাকে
তাপ বলে ।
[কোনো পদার্থের মোট তাপের পরিমাণ এর মধ্যস্থিত অণুগুলোর মোট
গতিশক্তির সমানুপাতিক ।
SI পদ্ধতিতে তাপের একক হলো
জুল (J) । ক্যালরি
এবং জুলের মধ্যে সম্পর্ক হলো 1 Cal = 4.2 J ।]
তাপমাত্রাঃ তাপমাত্রা হচ্ছে কোনো
বস্তুর এমন এক তাপীয় অবস্থা যা নির্ধারণ করে ঐ বস্তুটি অন্য বস্তুর তাপীয়
সংস্পর্শে এলে বস্তুটি তাপ হারাবে না গ্রহণ করবে ।
[তাপমাত্রাকে তরলের মুক্ত তল এবং বৈদ্যুতিক বিভবের সাথে
তুলনা করা যায় । যে বস্তুর তাপমাত্রা বেশি সে তাপ
হারায় আর যে বস্তুর তাপমাত্রা কম সে তাপ গ্রহণ করে । তাপমাত্রা
পরিমাপক যন্ত্রের নাম থার্মোমিটার । আন্তর্জাতিক
পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক কেলভিন (K) ।]
ত্রৈধবিন্দুঃ নির্দিষ্ট চাপে যে
তাপমাত্রায় পানি তিন অবস্থাতেই অর্থাৎ বরফ, পানি
এবং জলীয় বাষ্পরূপে অবস্থান করে তাকে পানির ত্রৈধবিন্দু (Triple
Point) বলে ।
কেলভিনঃ পানির ত্রৈধবিন্দুর
তাপমাত্রার 1/273 ভাগ কে এক কেলভিন (1 K)
বলে ।
নিম্নস্থিরাঙ্কঃ প্রমাণ চাপে যে
তাপমাত্রায় বিশুদ্ধবরফ গলে পানি হয় অথবা বিশুদ্ধপানি জমে বরফ হয় তাকে
নিম্নস্থিরাঙ্ক বলে । একে
হিমাঙ্ক বা বরফ বিন্দুও বলে ।
ঊর্ধ্বস্থিরাঙ্কঃ
প্রমাণ চাপে ফুটন্ত বিশুদ্ধ পানি যে তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্পে পরিণত হয় তাকে
ঊর্ধ্বস্থিরাঙ্ক বলে । ঊর্ধ্বস্থিরাঙ্ককে
স্ফুটনাংক বা বাষ্পবিন্দুও বলে ।
মৌলিক ব্যবধানঃ ঊর্ধ্ব এবং নিম্ন
স্থিরাঙ্কদুটির মধ্যবর্তী তাপমাত্রার ব্যবধানকে মৌলিক ব্যবধান বলে ।
কঠিন পদার্থের দৈর্ঘ্য প্রসারণঃ কঠিন
বস্তুতে তাপ প্রয়োগ করলে নির্দিষ্ট দিকে দৈর্ঘ্য বরাবর যে প্রসারণ হয় তাকে
বস্তুটির দৈর্ঘ্য প্রসারণ বলে।
দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগঃ 1m দৈর্ঘ্যের
কোনো কঠিন পদার্থের দণ্ডের তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধির
ফলে যতটুকু দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিপায় তাকে ঐ দণ্ডের উপাদানের দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগ বলে । এর
একক ।
ক্ষেত্র প্রসারণঃ
একটি কঠিন বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকরলে এর ক্ষেত্রফল বৃদ্ধিপায় । একে
ক্ষেত্র প্রসারণ বলে ।
ক্ষেত্র প্রসারণ সহগঃ 1m² ক্ষেত্রফলের
কোনো কঠিন পদার্থের তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধির
ফলে যতটুকু ক্ষেত্রফল বৃদ্ধিপায় তাকে ঐ বস্তুর উপাদানের ক্ষেত্র প্রসারণ সহগ বলে । এর
একক ।
আয়তন প্রসারণঃ কোনো কঠিন পদার্থের
তাপমাত্রা বৃদ্ধিকরলে এর আয়তন বৃদ্ধিপায়। একে আয়তন প্রসারণ বলে ।
আয়তন প্রসারণ সহগঃ 1m³
আয়তনের কোনো কঠিন পদার্থের তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধির
ফলে যতটুকু আয়তন বৃদ্ধি পায় তাকে ঐ বস্তুর উপাদানের আয়তন প্রসারণ সহগ বলে ।
প্রকৃত প্রসারণঃ তরলকে কোনো পাত্রে না
রেখে (যদি সম্ভব হয়) তাপ দিলে তার যে আয়তন প্রসারণ হতো তাকে তরলের প্রকৃত
প্রসারণ বলে । তবে তা সম্ভব নয় ফলে
পাত্রের প্রসারণ বিবেচনা করে প্রকৃতই তরলের যেটুকু প্রসারণ ঘটে তাই প্রকৃত প্রসারণ
।
আপাত প্রসারণঃ কোনো পাত্রে তরল রেখে
তাপ দিলে তরলের যে আয়তন প্রসারণ দেখতে পাওয়া যায়, অর্থাৎ
পাত্রের প্রসারণ বিবেচনায় না এনে তরলের যে প্রসারণ পাওযা যায় তাকে তরলের আপাত
প্রসারণ বলে ।
গলনঃ তাপ প্রয়োগে কঠিন
পদার্থকে তরলে পরিণত করাকে গলন বলে ।
গলনাঙ্কঃ যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থ গলতে শুরু
করে সেই তাপমাত্রাকে গলনাঙ্ক বলে ।
[সমস্ত পদার্থ না গলা পর্যন্তএই তাপমাত্রা স্থির থাকে ।]
বাষ্পীভবনঃ পদার্থের তরল অবস্থা
থেকে বাষ্পীয় অবস্থায় পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বাষ্পীভবন বলে ।
এই বাষ্পীভবন দুটি পদ্ধতিতে হতে পারে ।
যথাঃ ক। বাষ্পায়ন
।
খ। স্ফুটন
।
বাষ্পায়নঃ যে কোনো তাপমাত্রায়
তরলের শুধুমাত্র উপরিতল থেকে ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে
বাষ্পায়ন বলে ।
[ঘরের তাপমাত্রাতেও পানি জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । তাই পানি
কমে যায় ।]
স্ফুটনঃ তাপ প্রয়োগে একট নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তরলের সকল স্থান
থেকে দ্রুত বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে স্ফুটন বলে ।
স্ফুটনাঙ্কঃ যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো তরলের স্ফুটন
হয় বা বাষ্পে পরিণত হয়, সেই
তাপমাত্রাকে ঐ তরলের স্ফুটনাঙ্ক বলে ।
[স্ফুটনাঙ্কের মান চাপের উপর নির্ভর করে ।]
ঘনীভবনঃ উষ্ণতার হ্রাস ঘটিয়ে
কোনো পদার্থের বায়রীয় অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে
ঘনীভবন বলে ।
পুনঃশিলীভবনঃ চাপ প্রয়োগ করলে দুই
টুকরা বরফ এক টুকরায় পরিণত হয় । চাপ দিয়ে কঠিন বস্তুকে তরলে পরিণত করে ও চাপ
হ্রাস করে আবার কঠিন অবস্থায় আনাকে পুনঃশিলীভবন বলে ।
গলনের সুপ্ততাপঃ তাপ
প্রয়োগের ফলে কঠিন পদার্থের তাপমাত্রা যখন গলনাঙ্কে পৌছায় তখন সম্পূর্ণ পদার্থ
তরলে রূপান্তরিত হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রার আর পরিবর্তন হয় না । এখানে যে পরিমাণ
তাপ কঠিন পদার্থকে তরল অবস্থায় রূপাšতর
করল তাই গলনের সুপ্ততাপ ।
[এই তাপ বস্তুর তাপমাত্রার পরিবর্তন করে না কিন্তু
আন্তঃআণবিক বন্ধন শিথিল করতে ব্যয় হয় ।]
বাষ্পীভবনের সুপ্ততাপঃ তরল পদার্থকে তাপ
প্রয়োগ করতে থাকলে যখন তাপমাত্রা স্ফুটনাঙ্কে চলে আসে তখন যতই তাপ প্রয়োগ করা
হোক না কেন সম্পূর্ণ তরল বাষ্পে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা স্থির থাকে
। এখানে যে পরিমাণ তাপ তরল পদার্থকে বাষ্পীয় অবস্থায় রূপান্তর করল তাই
বাষ্পীভবনের সুপ্ততাপ ।
আপেক্ষিক তাপঃ 1kg ভরের
বস্তুর তাপমাত্রা 1K বাড়াতে যে পরিমাণ
তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর উপাদানের আপেক্ষিক তাপ বলে ।
[আপেক্ষিক তাপকে s দ্বারা
প্রকাশ করা হয় ।]
তাপ ধারণ ক্ষমতাঃ
কোনো বস্তুর তাপমাত্রা 1K বাড়াতে
যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন তাকে ঐ বস্তুর তাপ ধারণ ক্ষমতা বলে ।
[তাপধারণ ক্ষমতা বস্তুর উপাদান এবং ভরের উপর নির্ভরশীল । এর
একক ।]
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
# পদার্থের
তাপমাত্রিক ধর্ম বলতে কি বুঝ ?
উত্তরঃ তাপমাত্রার তারতম্যের
জন্য পদার্থের যে ধর্ম নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয় এবং এই পরিবর্তন লক্ষ করে সহজ ও
সূক্ষ্মভাবে তাপমাত্রা নিরূপন করা যায় সেই ধর্মকেই পদার্থের তাপমাত্রিক ধর্ম বলে । ঐ
পদার্থকে তাপমাত্রিক পদার্থ বলে । থার্মোমিটারের
মধ্যে তাপমাত্রিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় । তাপমাত্রিক
ধর্মগুলো হচ্ছে পদার্থের আয়তন, রোধ, চাপ
ইত্যাদি । পারদ থার্মোমিটারের
ক্ষেত্রে কাচের কৈশিক নলের ভিতরে রক্ষিত পারদকে তাপমাত্রিক পদার্থ এবং পারদ
দৈর্ঘ্যকে তাপমাত্রিক ধর্ম বলা হয় । একইভাবে
গ্যাস থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে ধ্রুব আয়তনে পাত্রে রক্ষিত গ্যাসকে তাপমাত্রিক
পদার্থ এবং গ্যাসের চাপকে তাপমাত্রিক ধর্ম বলা হয় ।
# বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন
ব্যাখ্যা কর ।
উত্তরঃ পদার্থের অণুগুলো
সর্বদা গতিশীল । কঠিন পদার্থের অণুগুলো
একস্থানে থেকে এদিক-ওদিক স্পন্দিত হয় । তরল
ও গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলো এলোমেলোভাবে ছুটাছুটি করে । অণুগুলোর
এই গতির জন্য গতিশক্তির সঞ্চার হয় । আবার
কঠিন পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ-বিকর্ষণ বল আছে বলে বিভবশক্তি আছে । গ্যাসীয়
পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ-বিকর্ষণ বল নেই বলে বিভবশক্তি নেই । পদার্থের
অণুগুলোর গতিশক্তি ও বিভবশক্তির সমষ্টিকে অভ্যন্তরীণ শক্তি বলে । স্পষ্টত
অভ্যন্তরীণ শক্তির এক অংশ গতিশক্তি অপর অংশ বিভবশক্তি । কোনো
বস্তুতে তাপীয় শক্তি প্রদান করলে তার অভ্যন্তরীণ শক্তি বাড়ে । তবে
অভ্যন্তরীণ শক্তির গতিশক্তি অংশটুকু শুধুমাত্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটায় ।
# তামার দৈর্ঘ্য প্রসারণ
সহগ বলতে
কি বুঝায় ?
উত্তরঃ তামার দৈর্ঘ্য প্রসারণ
সহগ বলতে
বুঝায় যে 1m দৈর্ঘ্যের তামার দণ্ডের
তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধি করলে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায় ।
# রেল লাইনে যেখানে
দুটি লোহার বার মিলিত হয় সেখানে ফাঁক থাকে কেন ?
উত্তরঃ রৌদ্রের তাপে ও চাকার
ঘর্ষণে লোহা উত্তপ্ত হয়ে প্রসারিত হয় । এই
প্রসারণের ফলে রেল লাইন বেঁকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । তাই
দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য লাইনের দুইটি বারের মধ্যে কিছুটা ফাঁক রাখা হয় ।
# তামার ক্ষেত্র প্রসারণ
সহগ বলতে
কি বুঝায় ?
উত্তরঃ তামার ক্ষেত্র প্রসারণ
সহগ বলতে
বুঝায় যে 1m² ক্ষেত্রফলের কোনো তামা
খণ্ডের তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধিকরলে তার
ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি
পায় ।
# তামার আয়তন প্রসারণ
সহগ বলতে
কি বুঝায় ?
উত্তরঃ তামার আয়তন প্রসারণ
সহগ বলতে
বুঝায়, 1m³ আয়তনের তামার
তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধি করলে আয়তন বৃদ্ধি পাবে ।
তরলের প্রসারণ দুই প্রকার ।
যথাঃ ক। প্রকৃত প্রসারণ ।
খ।
আপাত প্রসারণ ।
# গরমের দিনে নতুন মাটির কলসিতে পানি
রাখলে ঐ পানি ঠান্ডা হয় কিন্তু কাচ বা পিতলের পাত্রে পানি রাখলে তা ঠান্ডা হয় না
কেন ?
উত্তরঃ বাষ্পায়নে শীতলতার
উদ্ভবের কারণেই মূলত এমনটি হয় যে, গরমের
দিনে নতুন মাটির কলসিতে পানি রাখলে ঐ পানি ঠান্ডা হয় । মাটির
কলসির গায়ে অসংখ্য ছিদ্র থাকে ঐ ছিদ্র দিয়ে সর্বদা পানি চুইয়ে বাহিরে আসে ও
বাষ্পে পরিণত হয় । এজন্য প্রয়োজনীয়
সুপ্ততাপ কলসির পানি সরবরাহ করে এবং ঠান্ডা হয় ।
কিন্তু কাচ বা পিতলের পাত্রে পানি রাখলে তা ঠান্ডা হয় না । কারণ, ঐ
পাত্রের গায়ে ছিদ্র থাকে না এবং বাষ্পায়নের কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয় না ।
[অনুরূপভাবে, দেহ
থেকে যখন ঘাম বের হয়; তখন
পাখার বাতাসে ঠান্ডা অনুভূত হয় ।]
# কোনো বস্তুর তাপ ধারণ ক্ষমতা বলতে কি বুঝায় ?
উত্তরঃ কোনো বস্তুর তাপ ধারণ
ক্ষমতা বলতে
বুঝায় যে, ঐ বস্তুর তাপমাত্রা 1K বাড়াতে
10J তাপের প্রয়োজন ।
# সীসার আপেক্ষিক তাপ বলতে কি বুঝায় ?
উত্তরঃ সীসার আপেক্ষিক তাপ বলতে বুঝায় 1kg সীসার
তাপমাত্রা 1K বাড়াতে 130J
তাপের প্রয়োজন ।
#
ক্যালরিমিতির মূলনীতিটি লিখ ।
উত্তরঃ ভিন্ন তাপমাত্রার দুটি
বস্তুকে তাপীয় সংস্পর্শে আনা হলে তাদের মধ্যে তাপের আদান-প্রদান হয় । যে বস্তুর
তাপমাত্রা বেশি সে তাপ বর্জন করবে আর যে বস্তুর তাপমাত্রা কম সে তাপ গ্রহণ করবে ।
তাপের এই গ্রহণ ও বর্জন চলতে থাকবে যতক্ষণ না উভয়ের তাপমাত্রা সমান হয় ।
যদি গ্রহণ ও বর্জনের সময় কোনো তাপ নষ্ট না হয়, তবে
বেশি তাপমাত্রার বস্তু যে পরিমাণ তাপ বর্জন করবে কম তাপমাত্রার বস্তু সেই পরিমাণ
তাপ গ্রহণ করবে ।
অর্থাৎ মোট বর্জিত তাপ = মোট গৃহিত তাপ ।
এটাই ক্যালরিমিতির মূলনীতি ।
যেসব বিষয়ের উপর বাস্পায়ন নির্ভর করে
বায়ু
প্রবাহঃ তরলের উপর বায়ু প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে বাষ্পায়ন দ্রুত হয় ।
তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফলঃ তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফল যত
বেশি হয়, বাষ্পায়ন তত দ্রুত হয়
।
তরলের প্রকৃতিঃ বিভিন্ন তরলের বাষ্পায়নের হার বিভিন্ন । তরলের
স্ফুটনাঙ্ক কম হলে বাষ্পায়নের হার বেশি হয় । উদ্বায়ী
তরলের বাষ্পায়নের হার সর্বাধিক ।
তরলের উপর চাপঃ তরলের উপর বায়ুমণ্ডলের চাপ বাড়লে
বাষ্পায়নের হার কমে যায় । চাপ
কমলে বাষ্পায়নের হার বাড়ে । শূন্যস্থানে
বাষ্পায়নের হার সর্বাধিক ।
তরল ও তরল সংলগ্ন বায়ুর উষ্ণতাঃ তরল ও তরল সংলগ্ন বায়ুর
উষ্ণতা বাড়লে বাষ্পায়ন দ্রুত হয় ।
বায়ুর শুষ্কতাঃ তরল পদার্থের উপরিতলের বাতাস যত শুষ্ক হবে, অর্থাৎ
বায়ুতে যত কম পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকবে বাষ্পায়ন তত দ্রুত হবে ।
[শীতকালে বায়ু শুষ্ক থাকে বলে ভিজা কাপড় তাড়াতাড়ি
শুকায় ।]
গাণিতিক উদাহরণ
১। সুস্থ
মানুষের দেহের তাপমাত্রা 98.4°F । সেলসিয়াস
স্কেলে এই তাপমাত্রা কত হবে ?
২। 20°C তাপমাত্রায় একটি
ইস্পাতের দণ্ডের দৈর্ঘ্য 100m । 50°C তাপমাত্রায় এর দৈর্ঘ্য 100.033
m হলে ইস্পাতের দৈর্ঘ্য প্রসারণ নির্ণয়
কর ।
0 মন্তব্যসমূহ