সুপারকন্ডাক্টারের প্রতিরোধক্ষমতা
শূন্য হওয়ার কারণে প্রযুক্তিতে এর বহু উপযোগিতা রয়েছে । যেখানে
অবিচ্ছিন্নভাবে বিরাট পরিমাণের বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা প্রয়োজন, সেখানেই
রয়েছে এর বিশাল চাহিদা । খালি একটাই ব্যাপার – যে
সরঞ্জামের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ যাবে তাকে পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রায়
ঠাণ্ডা করে রাখতে হবে, কারণ
আমাদের স্বাভাবিক কক্ষ তাপমাত্রা বা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকলে ঐ
পদার্থের সুপারকন্ডাক্টার দশা লোপ পাবে । সুপারকন্ডাক্টিভিটীর
ইতিহাসের একদম শুরুর দিন থেকেই চেষ্টা চলছিল, এমন কোন বস্তু আবিষ্কার করার যায়
কিনা যা পরম তাপমাত্রাতেও সুপার কন্ডাক্টিভিটি বজায় রাখতে সক্ষম । যদিও সেরকম
জিনিসের এখনও দেখা মেলেনি ।
সুপারকন্ডাক্টারের সবথেকে প্রচলিত ব্যবহার
হচ্ছে শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে । সুপারকন্ডাক্টার দিয়ে বানানো তারের মধ্যে বিদ্যুৎ পাঠিয়ে বিরাট মাত্রার
চুম্বকীয় ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যায় । বিদ্যুৎপ্রবাহ ক্ষয় না পেয়ে অবিরাম চলতে থাকে এর ভেতর । তাকে কোন রকম শক্তির যোগান দেওয়ার প্রয়োজন
হয় না ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এম . আর . আই বা ম্যাগনেটিক রেসোনান্স ইমেজিং নামক যে যন্ত্রের মাধ্যমে শরীরের নানা বৃত্তান্ত বাইরে থেকে দেখতে পাই । যা তৈরি করা হয় তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ ও শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে । যার জন্য এখানে ব্যবহৃত হয় একটি প্রকাণ্ড বলয়াকার সুপারকন্ডাক্টার ।
আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে জাপানে আবিষ্কৃত এক অত্যাধুনিক ট্রেন প্রযুক্তি, যার নাম সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেটিক লেভিটেশন । ট্রেনের গায়ে লাগানো থাকে সুপারকন্ডাক্টার জাত চুম্বক আর রেললাইনের সঙ্গে থাকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ বাহী তারের সারি । পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে ট্রেনের ওপর এক বলের সৃষ্টি হয় যা তাকে লাইনের একটুখানি ওপরে শূন্যে ভাসিয়ে রাখে । এতে প্রবল গতিতে ট্রেন চলাচল সম্ভব হয় । যা সারা পৃথিবীর মধ্যে দ্রুততম ট্রেন হওয়ার নজির স্থাপন করেছে । এখন পর্যন্ত এ নিয়ে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে এবং আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই একে দৈনন্দিন যাত্রী পরিসেবার কাজে লাগানো যাবে ।
0 মন্তব্যসমূহ