সূত্র হওয়া সত্ত্বেও অ্যাভোগাড্রোর অনুকল্প কেন ?

বিজ্ঞান সম্মত কোন একটা চিন্তা যখন বাস্তবিক বা পরিক্ষনীয়ভাবে প্রমানিত হয়, কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণিত না হয় তখন তাকে অনুকল্প বলে । আবার যখন কোন অনুকল্প তাত্ত্বিকভাবেও প্রমাণিত হয়ে যায়, তখন তাকে তত্ত্ব বলে । তত্ত্বকে সংক্ষিপ্ত ভাষায় উপস্থাপন হল- সূত্র । সেদিক থেকে সূত্র হল- কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণার চূড়ান্ত ধাপ । পদার্থবিজ্ঞান এবং অজৈব রসায়নে আমরা অ্যামেদিয় অ্যাভোগাড্রোর যে সূত্রটি পরি, সেটা একটা সূত্র হওয়া সত্ত্বেও আমরা এটাকে কেন অ্যাভোগাড্রোর অনুকল্প বলছি ? এ প্রশ্নটি হয়তো অনেকের মনেই উদয় হয়েছে ।

গবেষণার ধাপগুলোর মধ্যে অনুকল্প ধাপটির কিছু বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে । এটি এমন একটি ধাপ, যেখানে একটা প্রমাণ মানুষের হাতে এসে যায়, কিন্তু অন্যটি থাকেনা । তাতে মানুষের সেই বিষয়ে অনুসন্ধানের প্রবণতা বেড়ে যায় । অনেকটা এমন, মনে করেন আজকে আইনস্টাইন বললেন- কাল দিনের বেলা সূর্যের পরিবর্তে চাঁদ আলো দেবে । পরের দিন সত্যি সত্যি দিনে সূর্যকে না দেখে আমরা চাঁদকে সূর্যের দায়িত্ব পালন করতে দেখলাম । অনেকেই হয়তো এতেই খুশি হবেন, কিন্তু যাদের মনে বিজ্ঞান আছে তারা প্রশ্ন করবেন, এটা কি করে সম্ভব ? তারা তাত্ত্বিক প্রমাণ চাইবেন । আইনস্টাইনকে খাতা কলম ধরিয়ে দিয়ে সেটা প্রমাণ করতে বলবেন । আইনস্টাইন যদি সেটা না পারেন, অনেকেই সেটা নিয়ে বসে যাবেন । কিভাবে সেটা প্রমাণ করা যায় ! অনেকেই চেষ্টা করে যদি সেটা না পারেন, তবে ব্যাপকভাবে সেটা সবার মধ্যে সারা ফেলবে । সবাই বলবে- এমন একটা ঘটনা ঘটেছে, যার তাত্ত্বিক কোন প্রমাণ নেই । কিন্তু সেটা ঘটতে সবাই দেখেছে ।

অ্যাভোগ্যাড্রোর অনুকল্পের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছিল । অ্যামেদিয় অ্যাভোগাড্রো উল্লেখ করেন, একই চাপ এবং তাপে নির্দিষ্ট পরিমাণ যেকোন পদার্থের মধ্যে সমান পরিমাণ অণু, পরমাণু এবং আয়ন থাকে । তার এই অনুসন্ধান বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে পুরোপুরি মিলে গিয়েছিল । সবাই শতভাগ ঠিক ফলাফল পেয়েছিলেন । কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে, তার কোন তাত্ত্বিক প্রমাণ তার অ্যাভোগাড্রোর কাছে ছিলনা । সেই সময় এটা ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে যায় । সবার মধ্যে সারা ফেলে, অ্যাভোগাড্রো এমন এক ধারনা দিয়েছেন যা বাস্তবিক পরিমাপের সাথে পুরোপুরি মিলে গেলেও কোন তাত্ত্বিক প্রমাণ নেই । যেহেতু বাস্তব এবং পরীক্ষণীয়ভাবে এটা প্রমাণিত ছিল, তাই এটি অ্যাভোগাড্রোর অনুকল্প নামে ব্যাপক পরিচিতি পায় । পরবর্তিতে বিজ্ঞানী মিলিক্যান সেটা তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করলে সেটা অনুকল্প থেকে তত্ত্ব এবং পরে সূত্র হয়ে যায় ।

কিন্তু সূত্র হয়ে গেলেও, পূর্বের পরিচিতিটি থেকেই যায় । সবাই এটাকে সূত্র নামে না ডেকে পূর্বের অ্যাভোগাড্রোর অনুকল্প পরিচিতিটি ধরে রাখে । তাই সূত্র হওয়া সত্ত্বেও এর অনুকল্প পরিচিতিটি রয়েই যায় । মিলিক্যানের অনেক বড় কৃতিত্ব থাকলেও তার নাম এভাবেই লোক মুখ থেকে ঢেকে যায় এই সূত্র থেকে ।

জিওন আহমেদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ