অনেকেই থ্রি ইডিয়টস মুভিটি দেখেছেন ।
মুভিটির একদম শুরুর দিকে অভিনেতা বোমান ইরানি যিনি ভাইরাস নামক শিক্ষক হিসেবে
অভিনয় করেছেন, তিনি সকল ছাত্র-ছাত্রীদের একটি কলম দেখান । যেটি ছিল মূলত একটি
অ্যাস্ট্রোনট কলম । মূলত মহাশূন্যে বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করা যায়না বিধায় সেখানে
অ্যাস্ট্রোনট কলম ব্যবহার করা হয় । তখন অভিনেতা আমির খান ভাইরাসকে জিজ্ঞেস
করেছিলেন, তাহলে পেন্সিল ব্যবহার করা যায়না কেন ?
প্রথমে আসি মহাশূন্যে কেন কলম ব্যবহার করা
যায়না ? যাদের অভিকর্ষ নিয়ে ধারণা আছে তাদের কাছে এর উত্তর বেশি জটিল নয় । আমরা
যখন কলমের ঠোট নিচে এবং পিছনের অংশটা উপরের দিকে রাখি, তখন উপরের কালিগুলো অভিকর্ষের
কারণে নিচের দিকে চেপে থাকে বা নামতে চায় । কলম দিয়ে লেখার সময় যখন ঠোটে লাগানো
বলটি ঘুরতে থাকে, তখন উপরে চেপে থাকা কালি বারবার বলে লেগে যায় । ফলে কালি এসে
খাতার পৃষ্ঠায় লেগে যায় এবং লেখা দৃশ্যমান হয় । একইভাবে আমরা যদি কোন একটি কলমকে
উল্টা করে দাঁড় করিয়ে রাখেন (পিছন অংশটা উপরে আর ঠোট নিচে) তবে কিছু সময় পরে কলমের
কালি পিছন দিয়ে বেড়িয়ে আসবে । এ কাজটি আমরা অনেকেই অসাবধানতা বসত করেছি । অনেকের
সেই কালিতে কাপড়ও নষ্ট হয়েছে । অবশ্য বর্তমানে এ সমস্যার একটা সমাধানও করা হয়েছে ।
কলমে কালি ভরার পর পিছনের ছিদ্রটিকে আঠালো কোন পদার্থ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় যাতে
কলম উল্টা করে পকেটে রাখলেও কালি বের হয়ে আসতে না পারে । বুঝতেই পারছেন, এখানে মূল
মেকানিজম হল অভিকর্ষের কারণে কালি নিচের দিকে চেপে থাকা । যদি কালি নিচের দিকে
চেপে না থাকত, তবে বলে কালি লাগত না এবং লেখা ও সম্ভব হত না । পল সি ফিশারের স্পেস পেন
এখন যেহেতু মহাকাশে অভিকর্ষ নাই, তাই সেখানে
কালি নির্দিষ্ট একটি দিকে চেপে থাকবেনা । তাই সেখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে বলে কালি
লাগবেনা । আর তাই সেখানে লেখাও সম্ভব নয় । তাই মহাকাশে কলম ব্যবহার করা আমাদের
পক্ষে অসম্ভব ।
যেহেতু কলম ব্যবহার করা যায়না, তাহলে তো
আমরা পেন্সিল ব্যবহার করতে পারি । কারণ পেন্সিলে তো মহাকর্ষ লাগেনা । মুভিতে যেমনটা
ভেবেই আমির খান ভাইরাসকে প্রশ্নটা করেছিলেন । আসলে মহাশূন্যে পেন্সিলও ব্যবহার করা যায় না । যদিও মহাকাশ যাত্রার প্রথম দিকে রাশিয়া এবং আমেরিকা মহাকাশে
গিয়ে পেন্সিলই ব্যবহার করতো । কিন্তু
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পেন্সিলের নিব
গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি ।
যা তাপ ও বিদ্যুতের একটি অত্যন্ত
ভালো মানের পরিবাহক ।
অভিকর্ষহীন মহাকাশে পেন্সিলের ভেঙ্গে যাওয়া নিব এর টুকরোগুলো অনেক বড় সমস্যার জন্ম দিতে পারে । যেমন সেগুলো বিভিন্ন
ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতির মধ্যে ঢুকে গিয়ে সেখানে শর্ট সার্কিট হতে পারে । ক্যাপসুলের মধ্যে
বিশুদ্ধ অক্সিজেনযুক্ত পরিবেশে আগুন
ধরে যেতে পারে ।
অ্যাপোলো-১ এর একটি কেবিনে অগ্নি বিস্ফোরণে সকল মহাকাশচারী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার পর, নাসা এমন একটা লেখার উপকরণ
খুঁজছিলো, যেটাতে আগুনের কোনো ঝুঁকি না নেয় । তখন পল সি ফিশার এর কলম বানানোর প্রতিষ্ঠান Fisher Space Pen
Company এই কলম বানানোর জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বাজেট করল । এরপর
নাসা প্রতিটি কলম কিনে নিলো মাত্র ২ ডলার ৯৫ সেন্ট দিয়ে । তার অল্প
কয়েকদিনের মধ্যেই রাশিয়ানরাও পেন্সিল বাদ দিয়ে এই বিশেষ কলম ব্যবহার করা শুরু করলো । যা শূন্যের নিচে থেকে শুরু করে ৩০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা পর্যন্ত কাজ করবে ।
জিওন আহমেদ
0 মন্তব্যসমূহ