পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো ইন্টারনেটের গতির দিক
থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেও অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো ইন্টারনেটের গতির দিকে এখনও
অনেক পিছিয়ে । এসব দেশে এখনও ইন্টারনেটের গতি KBps এর স্কেলেই পাওয়া যায় । MBps স্কেলের গতি
সাধারানত পাওয়া যায়না । কিন্তু ইলন মাস্কের স্টারলিংক প্রোজেক্ট এবার সবাইকে সমান গতির
ইন্টারনেট পৌছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে । যেখানে একটি অনুন্নত দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও
আপনি পেতে পারেন নিউইয়র্ক শহরের সমান গতির ইন্টারনেট ।
বিজ্ঞান
এবং মহাকাশ নিয়ে আগ্রহী কিন্তু ইলন মাস্ক এর নাম শুনেননি এমন মানুষ থাকবে বলে মনে হয়
না । এই ইলন মাস্কই পৃথিবীর ইন্টারনেট গতির এই অসমতা এবং দুর্দশা কমাতে নতুন
উদ্যোগ নিয়েছেন । যার নাম নাম "স্টারলিংক" প্রজেক্ট !
স্টারলিংক কি ?
স্টারলিংক হলো স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের জন্য ইলন মাস্কের
মহাকাশ সংস্থা স্পেস এক্স এর নির্মাণাধীন একটি কৃত্রিম স্যাটেলাইট
ইন্টারনেট প্রযুক্তি । এটি এমন এক প্রজেক্ট যেটি বাস্তবায়নের জন্য প্রায়
১২,০০০ এর মতো স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হবে ।
তবে এই স্যাটেলাইট গুলো হবে
লো-অরবিট স্যাটেলাইট । বর্তমানে অনেক কোম্পানি জিও-স্টেশনারী স্যাটেলাইট
ব্যবহার করে সেবা প্রদান করে ।
জিও-স্টেশনারী স্যাটেলাইট গুলো পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে
প্রায় ৩৫,৮০০ কিলোমিটার উপরে স্থির থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে । কিন্তু স্টারলিংকের
এই
লো-অরবিট স্যাটেলাইট গুলো মাত্র ৫০০-১,০০০
কিলোমিটার উপরে থাকবে । ফলে কভারেজ
এরিয়া কম হলেও স্পিড হয়ে অনেক বেশি । কভারেজ এরিয়ার সমস্যা দূর করতেও এত বিশাল
সংখ্যক স্যাটেলাইটের প্রস্তাব করা হয়েছে ।
স্টারলিংকের উদ্দেশ্য
স্টারলিংকের
উদ্দেশ্য মূলত গ্লোবাল কানেক্টিভিটি। একইসাথে হাই-স্পিড, লো-ল্যাটেন্সি, নেক্সট-লেভেল
ইন্টারনেট কানেকটিভিটি নিশ্চিত করাও এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য । যেখানে ফলে
স্টারলিঙ্ক সরাসরি প্রতিযোগিতা করবে বর্তমানের অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটির সাথে ।
স্টারলিংকের সুবিধা
স্টারলিংকের এই স্যাটেলাইটগুলো পুরো পৃথিবীকে জালের মতো ঘিরে ফেলবে এবং এর ফলে আপনি যেকোনো জঙ্গলের ভিতর থেকেও উন্নত দেশের প্রায় সমান স্পিড পাবেন । এটি হাই-স্পিড এবং লো ল্যাটেন্সী সেবা দিবে । হাই-স্পিড মানে কত দ্রুত ডাটা
আদান-প্রদান হচ্ছে ।
লো ল্যাটেন্সী কী ?
লো
ল্যাটেন্সী হচ্ছে একটা ডিভাইসের সাথে
আর
একটা ডিভাইসের রেসপন্স দিতে কত সময় লাগে এর পরিমাপ ।
ধরুন
আপনি আপনার এক বন্ধুর সাথে গুলাগুলির গেম খেলছেন । আপনার ইন্টারনেট স্পিড অনেক ফাস্ট আর ল্যাটেন্সীও
বেশি
। তো আপনি আপনার শত্রুকে দেখার সাথে
সাথে গুলি করলেন কিন্তু আপনার গুলি করার নির্দেশটা সার্ভারে গিয়ে পৌঁছাতে এবং সার্ভার
থেকে রেস্পন্স আসতে কিছু সময় লাগবে । আর এই সময়টুকুর মাঝেই হয়তো আপনার শত্রু সরে গিয়ে
আপনাকেই গুলি করে দিবে! এতে করে আপনি জেতা গেম হেরে যাবেন। এই বেশী ল্যাটেন্সীর জন্যই
আপনি হেরে গেলেন! এজন্য ল্যাটেন্সী গুরুত্বপূর্ণ।
যেভাবে কাজ করবে এটি
বর্তমানে
জিও-স্টেশনারী স্যাটেলাইট ব্যবহার হয় যা অনেক দূরে থাকে । দূরত্বের জন্য সিগন্যাল যাওয়া-আসা করতে অপেক্ষাকৃত
বেশী সময় লাগে । এর ফলে নেটওয়ার্ক স্পিড কমে
এবং ল্যাটেন্সী বাড়ে । এই স্টারলিংক
প্রজেক্টের স্যাটেলাইট কাছাকাছি থাকায় তাড়াতাড়ি সিগন্যাল যাবে ফলে নেটওয়ার্ক স্পিড
বাড়বে এবং ল্যাটেন্সী কম থাকবে। আরেকটা ব্যাপার হলো, জিও স্টেশনারীতে অপটিক্যাল ফাইবার
ব্যবহার হয় । এতে করে এসব ক্যাবলে আলোর গতি অনেকটা কমে যায় ।
পক্ষান্তরে এই স্টারলিংকে ব্যবহার হবে লেজার লাইট এবং বায়ু মাধ্যম, ফলে গতি কমবে না
জিও-স্টেশনারীর মতো । এটিতে আলো তার পূর্ণ গতিতে চলতে পারার কারণে
ডেটা আদান-প্রদানের স্পিডও বেশি হবে ।
স্টারলিংকের অসুবিধা
এতগুলো স্যাটেলাইট আকাশকে ঘিরে ফেলায় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে
সমস্যা হতে পারে । রেডিও সংকেত
আদান প্রদানে সমস্যা হতে পারে । তবে ইলন
মাস্কের স্পেস এক্স বলছে তারা এই বিষয় নিয়ে কাজ করছে ।
যত
তাড়াতাড়ি এটি বাস্তবায়িত হবে তত তাড়াতাড়ি আপনিও বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মতো সমান
স্পিড পাবেন । বাংলাদেশে বসেও জাপানের রাজধানী
টোকিও এর স্পিড পাবেন এমনটাই আশা করা হচ্ছে ।
বাংলাদেশে স্টারলিংক
মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহের প্রতিষ্ঠান ইলন মাস্কের স্টারলিংক বাংলাদেশকে তার সেবার আওতায় আনতে যাচ্ছে । ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে এন্টেনাযুক্ত রাউটারের প্রি-অর্ডার নেয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি । ২০২৩ সালেই এখানে তারা সেবা চালু করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে । ৯৯ ডলার ডিপোজিট করে যে কেউ অর্ডার করতে পারবে । যেহেতু বাংলাদেশে অনুমোদনের কিছু বিষয় আছে, সে ক্ষেত্রে তারা যদি সেবা চালু করতে না পরে তবে স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে ডিপোজিটের পুরো অর্থই গ্রাহক ফেরত পাবেন ।
জিওন আহমেদ
0 মন্তব্যসমূহ